বাঙ্গালায় আরব সাম্রাজ্যবাদ


"কারা মোদের ঘর ভেঙেছে, স্মরণ আছে........"




হায়দ্রাবাদের রাজাকরটি অধিক বিপদসূচক সমৃদ্ধ সীমাঞ্চল বিহারে পাঁচটি সিটে জয়লাভ করায় এবার তার শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে ধূলিয়ান-খাগড়াগড় মডেল-বাউল ফতোয়ার এই বঙ্গে। ১৮% এর বিহারে আপাতত মধ্যরাত্রি হলে অগণিত আরব ঘেঁটো সমৃদ্ধ ৩০% এর রাজ্যে ইতিমধ্যেই কালরাত্রি নেমেছে। নলেন গুড়ের ভাগাভাগির আশঙ্কায় ফেসবুকে থাকা গুটিকয় বাম এবং মসনদে আসীন উন্নততর বাম সরকারের কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভোট কাটাকাটির সুবিধা পেতে উহাদের হাতে ধরে বঙ্গে আনছে, বাম সেকুলারদের এই চিরাচরিত চর্বিত চর্বনের বাইরে অন্য একটি প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। আরব সাম্রাজ্যবাদী দল এলে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা মেরুকরণের সুযোগে জিতে যাবে অর্থাৎ যদি হিন্দু জাতীয়তাবাদের 'বিপদ' না থাকতো, তবে ইস.লামি মৌলবাদী দল এলেও এদের কারো কোনো সমস্যা থাকতো না!! “এমন দলের উত্থান চিন্তার”, এটা সেকুলাররা বলছেন না। তারা বলছেন, “জাতীয়তাবাদীরা সুবিধা পাবে। তাই, এমন দলের উত্থান চিন্তার।”


প্রাক স্বাধীনতা ভারতের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‛উহাদের’ হাতে ধরে কোথাও আনতে হয় নি। তারা এসেছেন, দেখেছেন, জয় করেছেন। হিন্দুরা কি করলো, তার পরোয়া না করেই তারা অধিক কট্টর বিকল্প বেছে নিয়েছেন বরাবর। এর বড়ো প্রমাণ ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন। এই নির্বাচনে লীগের ম্যানিফেস্টো "LET US GO TO THE WAR" জারি করেছিলেন বেঙ্গল প্রভিশনাল মু.সলিম লীগের সেক্রেটারি আবুল হাশিম। যা পরবর্তীতে Society for Pakistan Studies, Dacca থেকে জানুয়ারী,1970 সালে ছাপা হয়। যার মূল কথা ছিলো, তারা অখন্ড ভারতে বিশ্বাস করেন না, তারা পা.কিস্তানের দাবীতে নির্বাচন লড়বেন এবং লীগকে ভারতীয় মু.সলমানদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিদ্ধ করবেন। (বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে।) নিজের স্মৃতিচারণে(Memoir) আবুল হাশিম জানিয়েছিলেন যে, তার এই ম্যানিফেস্টোতে ক.মিউনিস্ট ভাবধারার প্রভাব রয়েছে। এবং এই ম্যানিফেস্টো লিখতে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন কমরেড নিখিল চক্রবর্তী। If islam!st comes, Can commun!st be far behind? বামপন্থীরা অতীতে লীগের নির্বাচনী ইশতেহার লিখে বর্তমানে সেকুলার হয়ে বিচার করতে বসেছেন, কে কাকে হাতে ধরে রাজ্যে আনছে!!


মজার ব্যাপার হলো, ওই নির্বাচনে হিন্দুরা 'সাম্প্রদায়িক' হিন্দু মহাসভাকে না বেছে, 'অসাম্প্রদায়িক' কংগ্রেসকে বিপুল ভোটে জেতায়। সেন্ট্রাল এসেম্বলির নন মহা.মেডান সিটগুলোতে কংগ্রেস-মহাসভা মুখোমুখি দ্বৈরথে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হয়। হিন্দু মহাসভার পক্ষে শুধুমাত্র শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী জয়ী হন। কিন্তু, শরৎ বোসের মুখের হাসি মিলিয়ে যায় ছয়টি মহা.মেডান সিটের ফলাফল দেখে। কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী মু.সলিম প্রার্থীরা লীগের কাছে বিপুল ভাবে পর্যুদস্ত হয়। সেইসময় কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভা দুই দলই দেশভাগের তীব্র বিরোধী ছিল। 


এই নির্বাচনে হিন্দু মহাসভার ম্যানিফেস্টো, যা জারী করেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভার তারক হালদার। (সেক্রেটারি, পার্লামেন্টারি বোর্ড।) “হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুসঙ্গ এই ভূমির সাথে সম্পৃক্ত। হিন্দুস্তান তাদের মাতৃভূমি, তাদের পবিত্র এবং ঐশ্বরিক ভূমি। হিন্দুদের অবশ্যই দেখতে হবে যে তাদের উপাস্য মাতৃভূমি যেন ধ্বংস হয় না। পবিত্র মাতৃভূমির ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য হিন্দুরা ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না। হিন্দুদের কাছে ভারত কেবল তাদের মাতৃভূমি নয়, পবিত্র পূজ্য স্থানও। হিন্দুরা শেষ অবধি তাদের মাতৃভূমির ভাঙন কখনই মেনে নেবে না। সুতরাং লক্ষ্য পরিষ্কার, অখন্ড ভারত এবং সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। এই ধর্মযুদ্ধে, হিন্দু মহাসভা কখনই হিন্দুর সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হবে না।” 


শেষমেষ মু.সলিম লীগ বঙ্গ আইনসভায় মোট মু.সলিম ভোটের 86% শতাংশ পেয়ে মু.সলিম সংরক্ষিত 119 টি সিটের মধ্যে 114 টি সিটে জয়ী হয়। অসংরক্ষিত আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় কংগ্রেস। সিদ্ধ হয়ে যায়, হিন্দুরা ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেসকে বেছে নিলেও ধর্মান্ধ লীগই বাঙ্গালায় ( ভারতেও) মু.সলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি। যতই গর্জনশীল চল্লিশা চলুক যে, ‛উহাদের পূর্বজরা ধর্মান্ধ পা.কিস্তান নয়,অসাম্প্রদায়িক ভারতকে বেছে নিয়েছিলেন’, একথা ধ্রুব সত্য যে তাদের পূর্বজদের একটা বড় অংশ লীগের পাকিস্তানের পথ সুগম করে ভারতে থেকে গেছিলেন।


 এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, LET US GO THE WAR (চলো আমরা যুদ্ধে যাই), 'একবৃন্তে দুটি কুসুম' এর বাঙ্গলা, যেখানে নাকি 'যাবতীয় সাম্প্রদায়িকতা'র অনুপ্রবেশ ২০১৪ সালে জাতীয়তাবাদী পার্টির বাড়বাড়ন্তের পর, সেখানে ১৯৪৬ সালে এক সম্প্রদায় যুদ্ধে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে কেন? অবশ্যই পা.কিস্তানের জন্য। কাদের বিরুদ্ধে? অবশ্যই ভূমিপুত্র পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে। আপনার হয়ত মনে হতে পারে,ওরা পা.কিস্তান পেয়ে গেছে, আমরা বাঙ্গালী হিন্দু হোমল্যান্ড পেয়ে গেছি। ব্যাস সব যুদ্ধ শেষ। এখন চারিদিকে শুধুই সম্প্রীতির পরিবেশ।


 যা আপনি জানেন না, তা হলো যুদ্ধ এখনো চলছে। যে যুবরা উর্দু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জীবন দিল, যে শিশুরা দেখছে স্কুলে সরস্বতী পুজো করার জন্য 'বড়কর্তা'র অনুমতি লাগবে, যে ছেলেটা আইনরক্ষকদের পিঠে তৌহিদী লাথি খেতে দেখছে, যে মেয়েটির বাড়ির লোক তার নিরাপত্তার আশংকায় শহরের দুধেলগরিষ্ঠ অংশ থেকে অপেক্ষাকৃত 'নিরাপদ' জায়গায় শিফট করছেন, যে গৃহবধূ এখনো লোকাল শিয়ালঘর থেকে বিজাতীয় ভাষায় মাইকের আওয়াজ শুনলে পূর্ব পাকিস্তানের অতীত ভেবে কেঁপে ওঠেন, কলকাতার কষাই সুরাবর্দীর চাটুকারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাদের স্থান হচ্ছে শ্রীঘরে, তারা জানেন যুদ্ধটা এখনো শেষ নয়। যুদ্ধটা এখানেই শেষ নয়। এই যুদ্ধটা হাইড্রার মতই বহুমুখী।


 যখন আড়াই পোঁচ মাটন শপে আরবেশ্বরের নামে জবাই করা মাংস কিনে কষ্টার্জিত পাঁচশ টাকার নোট বার করে জালিটুপির হাতে দেন, তখন অজান্তে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন আপনিও। হ্যাঁ, আপনি। রবি নজরুল আওড়ানো সুসভ্য বাঙ্গালী হিন্দু, আপনিও...


(ক্রমশ)........



তথ্যসূত্র:-


1.Communalism in Bengal: From Famine To Noakhali, 1943-47, Rakesh Batabyal


2.Bengal Provincial Hindu Mahasabha election manifesto, S.P.Mukherjee papers. S.F 74


3.Brothers Against the British Raj: A Biography of Indian Nationalists Sarat and Subhas Chandra Bose, Leonard A. Gordon





★★★


 এবার দেখে নিই কী ছিল লীগের সেই ম্যানিফেস্টোতে; যাতে সমর্থন জানিয়ে বাঙ্গালার '৩০%'-এর দাদা-নানারা ভারত ভাগের রাস্তা পরিষ্কার করেছিল...



...অল ইন্ডিয়া মু.সলিম লীগের পক্ষ থেকে কয়েদ-এ-আজম মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষণা করেছেন, আগামী কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন হবে(১৯৪৬ এর প্রভিশনাল ইলেকশন) পাকিস্তান তৈরির পক্ষে ভারতীয় মু.সলমানদের মতদানের ক্ষেত্র। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মু.সলিম লীগ (BPML) পয়লা আগস্ট, 1945 এর মিটিং এ সেই সংক্রান্ত একটি রেজুলেশন নিয়েছে। ব্রিটিশ লেবার পার্টি সরকারের মেজর এটলি এই চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেছেন।...



...বর্তমানে ব্যালট বাক্সই একমাত্র মাধ্যম, যেখানে সম্ভাব্য সর্বাধিক ত্রুটিহীন ভাবে জনতার অভিমত জানা যায়। তাই, সাদাসিধে এবং সচ্চা মু.সলিম, যারা কৌশলী মেশিনারীর শিকার নয়, তাদের প্রতিনিধি সংগঠন মু.সলিম লীগ ঘোষণা করছে, পাকিস্তান দাবির পক্ষে জনমত যাচাই এবং লীগই যে সারা ভারতের মু.সলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছে, তাদের এই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত, তার পরীক্ষা হিসেবে আগামী নির্বাচন এ অংশগ্রহণ করছে। মহামান্য সরকার পরবর্তী শীতকালে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। "অতএব, এই যুদ্ধের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনই হবে মু.সলমানদের পাকিস্তান দাবীর বিরুদ্ধে ভারতে যে শত্রুরা আছে, তাদের সাথে প্রথম ময়দানি লড়াই।"...




...বঙ্গীয় প্রাদেশিক মু.সলিম লীগ নির্বাচন জেতার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে। এই যুদ্ধ জেতার জন্য আমাদের সমস্ত শক্তি সম্পদকে একত্রিত এবং সক্রিয় করতে হবে। BPML বাংলার 35 মিলিয়ন মু.সলিমের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং 10 লক্ষেরও বেশি সদস্য লিগে যোগ দিয়ে নয়া রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এইরকম গণতান্ত্রিক সংগঠনে খুবই স্বাভাবিক যে নেতা, কর্মী, সদস্য, সমর্থকদের মধ্যে কিঞ্চিৎ মতভেদ আছে। "আমি সকলকে আন্তরিক অনুরোধ জানাচ্ছি, সব মতভেদ মুছে ফেলুন। দরকারে এইসব মতান্তর নির্বাচন চলাকালীন হিমঘরে রেখে দিন। এই মুহূর্তে ক্ষমতা বা ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দের সংঘাত বা অন্যকোন মতভেদ আমাদের জন্য আত্মঘাতী। আগামী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে এবং কিছু সময়ের জন্য ভারতের ভাগ্য এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।...



...এই যুদ্ধে সর্বপ্রকার ব্যক্তিগত, দলগত, মতাদর্শগত বিরোধের উর্দ্ধে আমাদের একত্রিত হতে হবে। আমাদের দলে যে কোনও বিরোধ উপেক্ষা করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে লীগের ওয়ার্কিং কমিটি 27 শে আগস্ট, 1946 এ দলের ইউনিয়ন, সাব ডিভিশনাল,জেলার কমিটি তৈরির প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক নির্বাচনের ফল ঘোষণা অবধি স্থগিত করছে। আমি BPML পার্লামেন্টারি বোর্ডের কাউন্সিলকে ডেকে পাঠাচ্ছি BPML পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্যদের নির্বাচনের জন্য। "আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড নির্বাচনের উপর সাধারণ নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করছে,তা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। তাই, আমি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মু.সলিম লীগের সব সভ্যদের সতর্ক করছি, এখন স্বজাতি প্রেমের উপরে ব্যক্তিস্বার্থ যেন স্থান না পায়।"...


...পাকিস্তান মানে পূর্ন স্বাধীনতা। যারা মনে করে সর্বোচ্চ সংগ্রাম এবং ত্যাগ ব্যাতীত পাকিস্তান অর্জন করা যাবে, তারা মূর্খ, স্বপ্নাচ্ছন্ন এবং দ্বিচারিতা করছে। পাকিস্তানের জন্য নিবেদিত প্রতিটি সৈন্য জানা উচিত, এই পথ অশ্বারোহী সৈন্যের পথ থেকেও দুর্গম।...



…….কংগ্রেস লীগের সাথে অকেজো এবং অপ্রয়োজনীয়  বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা সাহসিকতার সাথে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবো। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ খুবই দয়ালু ভাবে তার সম্প্রতি বক্তব্যে, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার প্রস্তাব অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটিতে পেশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সত্যই, অত্যন্ত সৌজন্যপূর্ন ব্যবহার তার। কিন্তু কংগ্রেসের পক্ষে দূর্ভাগ্যজনক যে, ভারতের মু.সলমানদের তারা যতটা বোকা ভাবে, মু.সলমানরা ততটাও বোকা নয়। খোদার রহমতে, তারা এখন কার্পেটের নীচে কী লুকিয়ে আছে, তা দেখতে সক্ষম।...


 


...পাকিস্তান ফর্মুলা অত্যন্ত সরল এবং ভারতের বাস্তবিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 'অখন্ড ভারত' এর পক্ষে থাকা কংগ্রেসের শাসনতান্ত্রিক আধিপত্য ও অর্থনৈতিক শোষণ এর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভিত্তি হলো প্রকৃত গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ন্যায় বিচার।...



...স্বাধীন ভারত কখনোই অখন্ড দেশ ছিল না। স্বাধীন ভারত কখনোই এক জাতি ছিল না। অতীতে মৌর্য্য দের, পরে মুঘল দের অধীনে এবং বর্তমানে ব্রিটিশদের অধীনে এই ভারত 'অখন্ড ভারত'। স্বাধীন ভারত অবশ্যই তেমন হবে যেমন উপরওয়ালা তাকে বানিয়েছেন, প্রত্যেক পৃথক জাতির পৃথক স্বাধীন বাসভূমির ভারতীয় উপমহাদেশ। যাই হোক, বোম্বের পুঁজিপতিদের জন্য কংগ্রেসের যতই সহানুভূতি থাক, যতই তারা 'অখন্ড ভারত' এর অছিলায় সমগ্র ভারতকে শোষণ করতে অগ্রসর হোক, কোনও গোষ্ঠী বা সংগঠনের একনায়কতন্ত্র স্থাপনের কংগ্রেসী প্রচেষ্টাকে মুসলিম ভারত নস্যাৎ করে দেবে।...


... আমরা আমাদের নিজের জনগণের পরিশ্রম ও ত্যাগের দ্বারা পাকিস্তান অর্জন করবো; ব্রিটিশদের সৌজন্য ও দানশীলতার মধ্য দিয়ে নয়। যেহেতু আমরা আমাদের অবস্থান নিয়েছি ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায়বিচার এবং দৃঢ়তার ভিত্তিতে, যেহেতু আমাদের সংগ্রামের প্রেরণা স্বাধীনতা ও মুক্তি; আধিপত্য ও শোষণ নয়, তাই আমরা ঐক্যবদ্ধ হলেই খোদার অনুগ্রহে বিজয়লাভ করবো। সুতরাং ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও স্বাধীনতা আমাদের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধের মূলমন্ত্র হবে।...



আমার বাংলা ভ্রমণের সময় দেখেছি, (তৌহিদী) জনতার মন এবং মস্তিষ্ক সম্পুর্ন তৈরি এবং তারা কোন ভুল করবে না। যদি না উপরতলার নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার চিন্তায় তাদের বিভ্রান্ত করে। তাই, একমাত্র সম্ভাব্য গোলযোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমাদের কখনোই ভোলা উচিত নয় যে পাকিস্তান নির্মাণই আমাদের অন্তিম লক্ষ্য এবং 1935 এক্ট এর আওতায় মন্ত্রীত্ব লাভ নেহাতই তুচ্ছ ব্যাপার। নেতাদের মধ্যে যিনিই ভবিষ্যতের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীপদের জন্য লালায়িত হবেন, তাকে চিহ্নিত করা হবে এবং মু.সলিম বাংলা তাকে কখনো ক্ষমা করবে না।...


...এই সাধারণ নির্বাচনেই আমাদের লড়াইয়ের শুরু। পোলিং সেন্টারে পাকিস্তানের সপক্ষে আমাদের মতদানের পর, নির্বাচনে জয়লাভ করে কংগ্রেসের মু.সলমানদের প্রতিনিধিত্বের দাবী নস্যাৎ করার পর, আমরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের দিকে নজর দেব। এবং পাকিস্তান তৈরির ভিত্তিতে ভারতের মানুষকে শীঘ্র স্বাধীনতা দেওয়ার দাবি জানাবো। আমাদের যুদ্ধ সকলের জন্য স্বাধীনতার যুদ্ধ যেখানে স্বাধীনতাকামী প্রত্যেক নরনারী আমাদের পাশে থাকবেন।...



...আমরা কংগ্রেসের সাথে লড়তে ইচ্ছুক ছিলাম না। তাদের অন্যায্য, অনৈতিক ফ্যাসিস্টসুলভ আচরণ আমাদের লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করেছে।..



..তাই, কোন বিদ্বেষ, প্রতিহিংসার ভাবনা ছাড়াই অন্তরে বিজয়ের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে, মাথার উপর খোদাকে সাক্ষী রেখে 

LET US GO TO WAR!..”


★★★


"কোন বিদ্বেষ, প্রতিহিংসার ভাবনা ছাড়াই " এইটুকু অংশকে লিগীদের 'ভালোবেসে মুরগী পোষা'র সমতুল্য ভেবে, বাকিটুকু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা একটা যুদ্ধে নেমেছিলেন। যাতে 'অধিকারী থিসিস'-এর ভারতকে খণ্ডে খণ্ডে বিভাজিত করার আইডিয়া নিয়ে শরিক ছিলেন কমিউনিস্টরাও। এখন 'মুsলিম লীগ ২.০'কে কেউ ডেকে আনে নি। তাদের ডাকতে হয় না। ৩০% তৌহিদির রাজ্যে তারা আসবেই।  যখন হিন্দুরা অসাম্প্রদায়িক কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল তখনও 'ভাই-লিগী'রা প্রবলভাবে ছিল। বরং, ওরা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে আছে বলেই শান্তিপ্রিয় সেকুলার বাঙ্গালী হিন্দু জাতীয়তাবাদী দের হাত ধরতে বাধ্য হচ্ছে। আজ থেকে ৭০ বছর আগে 'মুখে মারিতং জগৎ' উদার সেকুলাররা ভারত বিভাগের ট্রাজেডি রুখতে পারে নি। যারা বিগত ৭০ বছর ধরে হিন্দুর হাতে পেন্সিল ধরিয়েছে, তাদের দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করার ভুল যদি হিন্দুরা না করে, বদলে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলকে একটা সুযোগ দিতে মরিয়া হয়, তবে তাদের দোষ দেওয়া যায় না।  তুষের আগুনের মত উস্কে দেওয়া বাঙ্গালী-অবাঙালী, স্থানীয়-বহিরাগত বিতর্কে শ্যামাপ্রসাদের আদর্শকে 'অবাঙালী' দেগে দেওয়া, আবুল হাশিম, নিখিল চক্রবর্তীর মত 'বাঙ্গালী'র উত্তরসূরিদের বিচার পশ্চিম বাঙ্গালার মানুষই করবেন। 


এতদিন, ইদ্রিশ-নুরুল-রেজ্জাক-ইমরানদের সেকুলার দলে দেখেও প্রগতিশীলদের পিলে চমকায়নি বা ‛হিন্দুত্ববাদীরা সুবিধা পেয়ে যাবে’,এই খেয়াল আসে নি। এবার নিজামের শহর থেকে পঙ্গপাল আসছে দেখে তারা খুবই বিচলিত! কারণ, তখন মানুষের হাতে বিকল্প ছিলো না। এখন আছে। মানুষ এখন জেনে গেছেন পঙ্গপাল মারতে কী করনীয়। 


আসিতেছে শুভ দিন.......




তথ্যসূত্র:-


1.Communalism in Bengal: From Famine To Noakhali, 1943-47, Rakesh Batabyal


2.Bengal Provincial Hindu Mahasabha election manifesto, S.P.Mukherjee papers. S.F 74


3.Brothers Against the British Raj: A Biography of Indian Nationalists Sarat and Subhas Chandra Bose, Leonard A. Gordon


4.Musl!m Politics in Bengal, 1937-47, Shila Sen, Ph.D. Thesis, JNU, 1972,


5.1946 : The great Calcutta Killings and Noakhali genocide, A historical study, Dinesh chandra Sinha & Ashok Dasgupta


6.Towards Freedom: Documents on the movement for Independence in India 1947, Part 1 (Towards Freedom Series), Sucheta Mahajan




মন্তব্যসমূহ