বিজয় দিবস: কে বিজয়ী? কে বিজিত?
".....দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে, অভিশাপ আঁকি দিল তােমার জাতির অহংকারে…..."
অপমানে হতে হবে সবার সমান
ঢাকা শহরের প্রায় ফাঁকা রাস্তায় ঠেলাগাড়ি নিয়ে বের হয়েছে আসগর আলি এবং তার পুত্র মজনু মিয়া। পরনে কালাে রঙের প্যান্ট। গা খালি। তবে মাথায় কিস্তি টুপি আছে। মজনু মুসলমান এই পরিচয়ের জন্যে মাথার টুপি বাঞ্ছনীয়। পঁচিশে মার্চের পর আসগর দাড়ি রেখেছে। লােকমুখে শােনা যাচ্ছে মুখে দাড়ি আছে, কলমা জানে এরকম সাচ্চা মুসলমানদের মিলিটারিরা কিছু বলে না। চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। এই খবর প্রচারিত হবার ফলে অনেক হিন্দুও দাড়ি রেখেছে। বাইরে বের হবার সময় তারা মাথায় গােলটুপি দেয়। কানের ভাঁজে আতর মাখানো তুলা থাকে। এখন অবশ্যি মিলিটারিরা চালাক হয়ে গেছে। দাড়ি এবং টুপিতে কাজ হচ্ছে না। খৎনা হয়েছে কি-না, লুঙ্গি খুলে দেখাতে হচ্ছে।
আসগর আলি তার ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত। তার খৎ্না এখনাে হয় নাই। মিলিটারির হাতে ধরা পড়লে কোন ঝামেলা হয়- এই চিন্তায় আসগর অস্থির হয়ে থাকে। চার কলমা বাপ-বেটা কারােরই মুখস্থ নাই । আসগর আলি একটা কলমা জানে। কলমা তৈহিদ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। এক কলমায় হবে কি-না কে জানে! এই কলমা মজনুকে মুখস্থ করানাের চেষ্টা সে কয়েকদিন ধরেই করছে। মুখস্থ হচ্ছে না। দেখা গেল, কলমা জানার জন্যে এবং খৎনা থাকার কারণে মিলিটারি তাকে ছেড়ে দিল। ধরে নিয়ে গেল মজনুকে। মিলিটারির সঙ্গে দরবার করে কোনাে লাভ হবে না। দরবার করতে গেলে উল্টা গুলি খেতে হবে।
―জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, হুমায়ুন আহমেদ
****
আমার একজন মাষ্টার মশাই ছিলেন। পুরোদস্তুর ক্রিকেটপাগল ভদ্রলোক। সাকিব,মাশরফি,রুবেলদের খেলতে দেখলে 'ওরে, এগারোজন বাঙ্গালী খেলছে রে' বলে বেজায় উত্তেজিত হয়ে পড়তেন। ভদ্রলোকের বাপ, ঠাকুরদা, ঠাকুরদার বাপ, কেউই জীবনে কখনো বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তান দেখেন নি। একদিন, অশ্বিন বাড়িতে এলে ইলিশ চিংড়ি খাবে না, শাকিব খাবে গোছের বাকবিতণ্ডা চলতে চলতে আমার এক বন্ধু লাখ কথার এক কথাটা বলেই ফেলে,"ধুসস, ওরা কিসের বাঙ্গালী? ওরা তো মুসলমান।" ঘুমিয়ে আছে শরৎচন্দ্র সব বাঙ্গালীর অন্তরে।
ইতিমধ্যে "জয় বাংলা" র আবেগে থরথর প্রচুর লেখা সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাঘুরি করছে দেখে ঘটনাটা মনে পড়লো। ১৬ই ডিসেম্বর নাকি বাঙ্গালীর বিজয় দিবস! গোটা পৃথিবীর মধ্যে এই একটিমাত্র দেশই আছে, যেখানে রাষ্ট্রভাষা বাঙ্গালা, তাও আবার অর্জিত হয়েছে জাত ধর্ম নির্বিশেষে ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালীর তাজা রক্তের বিনিময়ে! আবেগের কমতি নেই এপার বাঙ্গালাতেও। যে জাতি নিজেদের বাঙ্গালী পরিচয় চুরি যাওয়ার দিনটা নিয়ে এত আবেগে ভাসে, তাদের দেখে আজকাল আর রাগ হয় না। করুনা হয়। এই বিজয় দিবসে সবাই ভালো ভালো কথা বলছেন। আমরা বরং দুটো তেতো প্রসঙ্গই আলোচনা করি। বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়ে,সাথে সিমলা চুক্তির মত একটা একপেশে,পাকিস্তানের পক্ষে অধিক সুবিধাজনক চুক্তি মেনে ভারত কি পেলো,সে প্রসঙ্গ বরং মুলতুবি থাক। মদিনা সনদের দেশের বিজয় দিবসে 'বেগানি শাদী মে আব্দুল্লাহ দিওয়ানা' র মত নেচে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা কি পেলো বা পাচ্ছে, সেইটা আগে পরিস্কার হওয়া দরকার। একটা সামান্য প্রশ্নের উত্তর অধুনা বাংলাদেশ প্রেমী পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙ্গালী কিছুতেই দেন না, বা জিজ্ঞেস করলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলুন তো, এ কেমন বাঙ্গালীর দেশ, যেখান থেকে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীকেই এক কাপড়ে চলে আসতে হয়? এ কেমন বাঙ্গালীর দেশ, যেখানে তথাকথিত বিজয়ে উদ্বেলিত পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়,আপনারা যারা সাতচল্লিশ, পঞ্চাশ, আটান্ন, বাষট্টি, কিংবা পঁয়ষট্টি সালে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে এসেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আবার তাঁরা এককালের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারবেন যদি ভেবে থাকেন, তবে তা অলীক স্বপ্ন? এ কেমন বাঙ্গালীর দেশ, যেখানে ৭১ এর পর জন্মভূমির টানে বাংলাদেশে ফেরা বিখ্যাত মোক্তার অশ্বিনী বাবু তার ভিটায় বসে আক্ষেপের সুরে বলেন, “কিন্তু,দেশটা যে বদলে গেছে,বুঝিনি। গৃহদেবতা নেই, ঠাকুরঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, মেয়ে দুটোকেই ধর্মত্যাগ করতে হল, এর যে কত দুঃখ-- সে আপনি বুঝবেন না?” এ কেমন বাঙ্গালীর দেশ যেখানে ভাষা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কুমিল্লার ভিটে জবরদখল হয়ে যায়? এ কেমন বাঙ্গালীর দেশ যেখানে শুধু ধর্মটা আলাদা বলে এখনো প্রত্যহ গড়ে ৬৩২ জন বাঙ্গালীর কাছে দেশটা 'আমাদের আছে' থেকে দেশটা 'আমাদের ছিল' হয়ে যায়?এ কেমন বাঙ্গালীর দেশ, যেখানে পাকিস্তানী উর্দুভাষীরা হেরেও জিতে গেছে?
লেখা শুরু করেছিলাম হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের কিয়দংশ দিয়ে। 'কলমা জানা সচ্চা মুসলমানদের মিলিটারিরা কিছু বলে না,খৎনা হয়েছে কিনা লুঙ্গি খুলে দেখাতে হচ্ছে,' আজ্ঞে এগুলোই ১৯৭১ এর একমাত্র সত্য। জনৈক আসগর আলির জন্য যে সত্য অপেক্ষাকৃত সহজ, জনৈক আশু অধিকারীর জন্য তা পাহাড় প্রমান কঠিন। তাই, পাকিস্তানী মিলিটারি ধর্ম নির্বিশেষে বাঙ্গালীর উপর নির্যাতন করেছে, একথা বললে সত্যের অপলাপ হয়। ঢাকায় হিন্দু বাড়িগুলোকে ধরে ধরে মার্কিং করা হতো, মুসলমান মেজরিটি দেশে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে ২৪ লাখ বাঙ্গালী হিন্দু। এর অধিক কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে কি? আদতে, পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমানরা মনে করতো, পূর্ব পাকিস্তানি মুসলমানরা হিন্দুদের সংস্পর্শে থেকে কাফের হয়ে যাচ্ছে, তাদের শায়েস্তা করা প্রয়োজন। খাঁটি মুসলমান তৈরিতে পূর্ব পাকিস্তানের রমনীদের গর্ভে পাক বীজ ভরে দেওয়ার টিক্কা খানীয় নিদান এই উদ্দ্যেশ্যেই দেওয়া হয়েছিল। এবং তা যে একেবারে ব্যর্থ হয় নি, ভারতীয় কাপড় পরা, ভারতীয় বই পড়া, ভারতীয় ছবি দেখা, ভারতীয় গান শোনা, কলকাতা, মুম্বাই, ভেলোরে চিকিৎসা করানো এক শ্রেণীর বাংলাদেশী মুsলমানের,"শালার ইন্ডিয়া । দেশটাকে শেষ করে দিল। দেশটাকে ভারতের খপ্পর থেকে বাঁচাতে হবে।” আদি বাক্যবাণ শুনে বোঝা যায়। পূর্ব - পশ্চিম পাকিস্তানী মুসলমানদের মধ্যে ক্ষমতার দড়ি টানাটানিতে মুরগী হয়েছে বাঙ্গালী হিন্দু। যা তারা বরাবরই হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গীয় সেকুলাররা সুকৌশলে ভাষা প্রেমের কুমিরছানা দেখিয়ে বাঙ্গালী হিন্দু গনহত্যার বৃহত্তর চিত্রটি সচেতন ভাবে এড়িয়ে যান।
বধ্যভূমি পাকিস্তানে নিঃস্বার্থ ভাবে নিখাদ ভালোবাসা থেকে বাঙ্গালা ভাষার অধিকার নিয়ে সর্ব প্রথম সরব হয়েছিলেন এক হিন্দু বাঙ্গালী। কোন খান, আলী বা শেখের বাচ্চা নয়। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে করাচির জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে ঘােষণা করা হল, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবলমাত্র উর্দু ও ইংরাজি। পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দেয়। ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদে (সিএপি, কনস্টিটুয়েন্টস অ্যাসেম্বলি অফ পাকিস্তান) বাঙ্গালা ভাষার প্রশ্নে মহম্মদ আলি জিন্নাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে প্রথম বাঙ্গালা ভাষার অধিকারের দাবি তােলেন কুমিল্লার স্বাধীনতা সংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। অকাট্য যুক্তি দিয়ে এই স্বাধীনতা সংগ্রামী জানান, "Out of six crores and ninety lakhs of people inhabiting this State, 4 crores and 40 lakhs of people speak the Bengali language. So, Sir, what should be the State language of the State (of Pakistan)? The State language of the State (of Pakistan) should be the language which is used by the majority of the people of the State, and for that, Sir, I consider that Bengali language is a lingua franca of our State." ধীরেন্দ্রনাথের এই বক্তব্য উর্দুভাষী মুসলমান নেতারা এবং তাদের বাঙ্গালাবিদ্বেষী বাংলাভাষী দালালরা ভালােভাবে নেয়নি। ধীরেন্দ্রনাথের বক্তব্যকে সমর্থন জানান দিনাজপুরের তফশিলি উপজাতির নেতা ও রাজবংশী সমাজের প্রথম আইনজীবী প্রেমহরি বর্মণ, বিপ্লবী ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত, রাজকুমার চক্রবর্তী আর শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। পাকিস্তানের গণপরিষদে লিয়াকত-নাজিমুদ্দিনদের বাংলাবিরােধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন কেবলমাত্র হিন্দুরাই। প্রতিবাদে লিয়াকত আলি বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন। শুধুমাত্র উর্দুই দুই পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে। পাক ওয়াজির এ আজম লিয়াকত আলী পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইসলামী চরিত্রটি স্পষ্ট করে আবারও জানিয়ে দেন, "He (Mr. Dhirendranath Dutta) should realize that Pakistan has been created because of the demand of a hundred million Muslims in this sub-continent and the language of a hundred million Muslims is Urdu and, therefore, it is wrong for him (Dhirendranath Dutta) now to try and create the situation that as the majority of the people of Pakistan belongs to one part of Pakistan, therefore, the language which is spoken there should become the State language of Pakistan. Pakistan is a Muslim State and it must have its lingua franca, the language of the Muslim nation." ভুলে গেলে হবে না, সেই লিয়াকত আলী, নাজিমুদ্দিন জুটি যাদের দিল দিল পাকিস্তান দাবির লড়াইয়ে অগ্রণী সৈনিক ছিলেন 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী' মুজিব। ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারির এই দিনে একজন বাংলাভাষী মুসলমানও গণপরিষদে উর্দু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনাে প্রতিবাদ করে নি। ২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ এ ঢাকায় শুরু হলো গনহত্যা। নৃশংসভাবে খুন করা হলো ঢাকার জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক জি সি দেব, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য দের। ২৮ শে মার্চ রাত দেড়টাতেই কুমিল্লার কুখ্যাত রাজাকার অ্যাডভােকেট আবদুল করিমের সহায়তায় পাকিস্তানি আর্মি এল ধীরেন্দ্রনাথের বাড়িতে। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যাওয়া হল অশীতিপর বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ ও তার ছােট ছেলে দিলীপকে, তারপর ক্যান্টনমেন্টেই খুন করা হল এই ভাষাসৈনিককে। ১৯৮৩ সালে ধীরেন্দ্রনাথের নাতনি আরমা দত্ত জানতে পারলেন, তাঁদের কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভিটেবাড়ি শত্রু সম্পত্তি আইনে দখল হয়ে যাচ্ছে। আরমা আদালতে গেলে বাঙ্গালা ভাষার তথাকথিত ঠিকাদার বাংলাদেশের আদালতের বিচারক জানালেন, এই বাড়িটি অবশ্যই শত্রু সম্পত্তি, কারণ ওখানে কেউ থাকে না। যে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করা আছে, তিনি 'ইণ্ডিয়ায় চলে গেছেন'। হতবাক আরমা দত্তের উকিল জানালেন এই কথা আদ্যন্ত মিথ্যা, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত মুক্তিযুদ্ধের শহীদ। বিচারকের উত্তর: তাই নাকি! ডেথ সার্টিফিকেট আছে? দেখাতে পারবেন? ক্যান্টনমেন্টে খুন হওয়া বাঙালী হিন্দুর ডেথ সার্টিফিকেট দেখানাে সম্ভব হয় নি। কিসের মুক্তিযুদ্ধ, কাদের দেশ, কেমন ভাষাপ্রেম ইত্যাদি ভেবে স্বর্গীয় ধীরেন্দ্রনাথ বোধকরি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।
যে মুজিবর রহমান তার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' তে লিখছেন, “তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। শুধু মুসলিম লীগ, আর ছাত্রলীগ।…মুসলিম লীগ বললেই গোপালগঞ্জে আমাকে বোঝাত।…পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নাই।", তিনিই পাকিস্তানের শাসকদের সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে পড়লেন কেন?
কারণ, পাকিস্তান সরকারের বড়ো বড়ো পদগুলিতে উর্দুভাষী মুসলিম রিক্রুট, উর্দু না জানায় বাংলাভাষীরা পিছিয়ে পড়ছে, রাজনৈতিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্র ঢাকা থেকে ইসলামাবাদের দিকে শিফট হচ্ছে দেখে বাংলাভাষী মুsলিমরা প্রমাদ গোনে৷ তাদের ভাষা 'প্রেম' জেগে ওঠে। যদি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আরবী হতো, কোন মুক্তিযুদ্ধই হতো না, এ কথা হলফ করে বলা চলে। তা বাদে, পাকিস্তান ভাঙার কোন পরিকল্পনা তাদের ছিলো না। অতিরিক্ত কিছু ক্ষমতা, সুবিধা লাভের প্রয়াস, পাকিস্তান এসেম্বলিতে আধিপত্য বিস্তার, এইসব ছিল মাত্র৷ পাকিস্তানের ভিত্তিপ্রস্তর ইসলাম। সে বিষয়ে বাংলাভাষী-অবাংলাভাষী মুসলমানের কোন দ্বিমত ছিলো না।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করেন। ফলাফলে দেখা যায়,পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু, পূর্ব পাকিস্তানী স্বায়ত্তশাসনের ছয় দফা দাবী মানতে পশ্চিম পাকিস্তান অস্বীকৃত হলে নতুন সংবিধান গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পাকিস্তান এসেম্বলিতে পূর্ব পাকিস্তানের অংশীদারিত্ব বেশী ছিল। স্বভাবতই, মুজিব অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তাই,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, না অটুট পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রীত্ব, কোনটা তিনি গ্রহণ করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে মুজিব তখন অতিশয় চাপের মধ্যে ছিলেন। শেষে ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে ঢাকার রেসকোর্সে ভাষণ দেন। মুজিবের পাকিস্তান প্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় ৭ ই মার্চ, ১৯৭১ সালে ঢাকা রেসকোর্স রোডের জনসুনামিতে সেই বিখ্যাত ভাষণ থেকে। যেখানে তিনি ভাষণ শেষ করেন,'জয় বাংলা, জিয়ে পাকিস্তান' দিয়ে।
কথিত আছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর থেকে পাকিস্তান ভাঙার পর্যায়ে চলে গেছিলো মূলত ছাত্রনেতাদের চাপে, মুজিব নাকি শেষ অব্দি এই নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন মুক্তি সংগ্রাম চালাবার জন্য ভারতের মদতে বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন ও সাফল্যের সঙ্গে মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যান, ঢাকা পৌছে দেশে দেশে প্রতিনিধি পাঠিয়ে মুজিবের মুক্তির জন্য প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের সৃষ্টি করে মুজিবের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করলেন, যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনো ভূমিকা না নেওয়া সত্ত্বেও মুজিবকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চালিয়ে ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বিনা দোষে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করলেন! শুধু তাই নয়,মুজিবের একক ইচ্ছায় Law Continuation order of ১৯৭১ ঘােষিত হয়। যার জেরে বাংলাদেশ পাকিস্তানের উত্তরাধিকারী সরকার হল। ইসলামিক পাকিস্তানের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ। ব্যাস,গল্প এখানেই শেষ।
না, গল্পের আরো কিছুটা বাকি আছে।বাংলাদেশ সৃষ্টির কয়েক মাস পর মুজিব ইসলামিক সম্মেলনে যোগ দিতে ইsলামাবাদে যান। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর সাথে চুম্বন বিনিময়ের মাধ্যমে প্রমাণ করেন তার মনের গভীর ইসলামিক মানসিকতা ও প্রীতির কথা। ঢাকার প্রতিটি সংবাদপত্রে এই চুম্বনের ছবি ছাপানাে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী বেলুন তখনই চুপসে যায় যখন, ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আলজিয়ার্সে গিয়ে মুজিব ঘোষণা করেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিলেও স্বভাবতই আরব আমাদের ভাই। সেই হিসেবে পাকিস্তানও ভাই হওয়ার কথা। হলোও তাই।
১৯৭২ সালের মাঝামাঝি সময় ভারতের প্রাক্তন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী গুলজারীলাল নন্দ ঢাকা গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, "১৯৬৪ সালে আমার প্রধান মন্ত্রিত্ব কালে আদমজি জুট মিল থেকে দাঙ্গা শুরু হয়। তারপরে তা পূর্ববঙ্গের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তারই প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গার পরিবেশ সৃষ্টি হলে আমি তা কঠোর হস্তে থামাতে চেষ্টা করি। পরে লক্ষ লক্ষ রিফিউজি কলকাতায় প্রবেশ করে। সেই আদমজি জুট মিল ও তার পরিবেশ দেখার ইচ্ছে থাকলেও মন আর চাইছে না। এখানে এসে সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে হিন্দুদের ভবিষ্যতের আশা কম। আমি খুব আশা নিয়েই ঢাকায় এসেছিলাম, ফিরে যাচ্ছি বেদনা নিয়ে।"
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘ ৩০ বছর অধ্যাপনা করা ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার ১৯৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতায় উৎফুল্ল পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, "আর পাঁচটা বছর অপেক্ষা করুন।" সভায় উপস্থিত কলকাতা নিবাসী বিপ্লবীরা, যাদের পূর্ব বঙ্গের সাথে তেমন যোগাযোগ ছিলো না, তাদের কথানুসারে, যদি ইংরেজদের সাথে লড়ে ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারি,তবে মুসলমানদের সাথে লড়ে পারবো না কেন? Nationality and empire এ বিপিন চন্দ্র পালের সেই দূরদর্শী মত,"প্যান ইউরোপিয়ান সাম্রাজ্যবাদ নয়, আমাদের সামনে দীর্ঘমেয়াদি মূল বিপদ প্যান ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদ" উপলদ্ধি করেছিলেন ওই সভায় উপস্থিত কুমিল্লার এক প্রবীণ বিপ্লবী। তিনি রমেশবাবু কথায় সম্মতি জানান। বাংলাদেশের হিন্দুরাও অনুরূপ ভাবতেন।
অবিভক্ত বঙ্গের প্রতিটি মুসলিম বিধায়ক বঙ্গীয় আইনসভায় ইসলামিক পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাখা যাবে না। কারণ, বাঙ্গালী সংস্কৃতির রুট ঘোরতরভাবে নন ইসলামিক, এই মর্মে বুঝেই মুজিব ইসলামাবাদ থেকে বুদ্ধি ও মদত নিয়ে ঢাকায় ফিরে এসেই ইসলামিক দেশের তেলের টাকা ও পাক-বাংলাদেশ সরকারের টাকায় গড়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড। আরবি হরফ ও উর্দু ভাষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্র চালু হল।
মুজিবুর রহমান ঘনিষ্ঠ মহলে প্রায়ই বলতেন,...বাংলাদেশের হিন্দুদের সামনে তিনটি পথ খোলা আছে। স্বেচ্ছায় মুসলমান হয়ে যাওয়া,খুন হয়ে যাওয়া, প্রান বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়া! কিন্তু, খলজি বাঘের পিঠে চেপে শেষমেষ তিনি কি পেলেন? সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় মুজিবের মূর্তি ভাঙা হয়েছে কারণ মূর্তি নাকি অনৈসলামিক। একদিন, তিনিই মুসলমানরা মেনে নেবে না বলে রমনা কালীবাড়ির পুনঃপ্রতিষ্ঠায় বাঁধা দিয়েছিলেন। সেদিন যারা মা কালীর মূর্তিকে মেনে নেয় নি,আজ তারা মুজিবের মুর্তিকেও মানছে না। Justice delayed but delivered. দাঁড়ি টুপি খৎনায় সাচ্চা মুসলমান আসগর আলী কি পেয়েছিলো? খান সেনারা তাকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করে।
১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে অসংখ্য হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনায় ব্যথিত মেদিনীপুরের সফিয়া বেগম লিখেছিলেন,"যে গুন্ডারা নারীর মর্যাদা রক্ষা করিতে জানে না। স্বজাতি হইয়াও যে তারা একদিন আমাদের সতীত্ব নষ্ট করিবে না,তাহা কে বলিতে পারে?"
বিধাতার মারের বৃত্ত তখনই সম্পূর্ণ হতে দেখি যখন মুসলিম লীগের নেতা মৃধার দুজন মেয়েকে খানসেনারা তুলে নিয়ে গেলে, বুড়িবিবি তার কট্টর ভারত বিদ্বেষী ছেলেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন,"কথা কস না ক্যান? মুখে রাও নাই ক্যান? পাকিস্তান বানাইছিলি না? তহন হিন্দু মাইয়াদের উপর জুলুম অইলে কইতিস অমন দু'একডা অয়। অহন দ্যাখ আল্লার ইনসাফ আছে কি না। দ্যাখ, চোখ খুইল্যা দ্যাখ। আহ, আমার সােনার বুবুগাে আমি খডে পামু?” পূর্বে বুড়িবিবির পাকিস্তান ভক্ত পুত্র মৃধা যখন দহলিজের সম্মুখস্থ বাগান দখল করে নেয়, তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, প্রতিবেশী বিজয় বসুর সম্পত্তি সে কী করে পেয়ে গেল? উত্তর আসে, "হেরা হিন্দুস্তান যাওয়ার অক্তে দিয়ে গ্যাছেগা।" বিজয় দিবসের পর বিজয় বসু কি নিজের ভিটেমাটিতে ফিরতে পেরেছিলেন? আমরা জানি না,তার উত্তরপুরুষ ব্লাড ট্রেটর হয়েছে,না রক্ত ঋণ মনে রেখেছে। কিন্তু, বিজয়ের সমসাময়িক মৃধাকেও সম্বল খুইয়ে একই সরলরেখায় দাঁড়াতে হয়েছিলো। এই জন্মেই।
তবুও বৃত্তটা সম্পুর্ন হয় নি। ওদেশে কে আটআনা সচ্চা মুসলমান, কে দশআনা সাচ্চা মুসলমান, কে ষোলআনা সচ্চা মুসলমান এই বিরোধ দিন দিন বাড়ছে। বোতলের দৈত্যকে মুক্ত করলে,তার হাত থেকে মালিকেরও রেহাই নেই। "সমস্ত নদী গ্রাস করেও সমুদ্রের তৃষ্ণা মেটে না", বোধিসত্ত্ব বলেছিলেন। যারা মুখে স্বীকার না করলেও মনে মনে জানে স্বাধীনতার জন্যে ভারতের সাহায্য নিতে হয়েছিল, যাদের আত্মপরিচয়ের সংকটের দরুন ইতিহাস শুরুই হয় ১৯৭১ থেকে, যারা আরবদের চোখে খাঁটি মুসলমান নয়, তাদের হীনমন্যতা আসা স্বাভাবিক। সাথে অবধারিত ভাবে আসে 'কারা সহী মুসলমান' প্রমাণের ব্যাকুলতাও। পশ্চিম পাকিস্তানি মুসলমানরা মনে করতো, পূর্ব পাকিস্তানি মুসলমানরা হিন্দুদের সংস্পর্শে থেকে কাফের হয়ে যাচ্ছে,তাদের শোধরাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পর পাঁচ দশক ধরে যাবতীয় কাফেরত্ব ঘুচিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে পাকিস্তানের থেকেও বড় মাপের পাকিস্তান।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় অবদানের লেশমাত্র স্মৃতির আভাষ যেন বাংলাদেশের বাতাসে না থাকে,এমন বন্দোবস্তই করা হয়েছিলো। ঢাকার রমনা মাঠে তাজুদ্দিন নির্মিত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নামাঙ্কিত স্মারক মঞ্চটি ভাঙার আদেশ দিয়েছিলো মুজিব প্রশাসন। বাংলাদেশে অসংখ্য স্মৃতিস্তম্ভ থাকলেও, – যে সব ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মবলিদান দিলেন,তাদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয় নি। কোন গল্প,উপন্যাস,সাহিত্যে ভারতীয় মিত্রতার ইতিহাসের লেশমাত্র থাকলে রচয়িতাকে 'ভারতের দালাল ' দাগিয়ে দেওয়া হবে। এবং প্রচলিত স্রোতের বিরুদ্ধে গতিশীল কলম যে কোন দেশে কমই থাকে। ওদেশের পাঠ্যপুস্তকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বদলে গেছে শুধু 'মিত্রবাহিনী' তে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হয়েছে শুধু 'হানাদার বাহিনী'। ফলে,কওমী একতার আতরগন্ধী পথে অগণিত ধর্ষিত নারীর ছিন্ন যৌনাঙ্গ, রক্তাক্ত নিতম্ব,খুবলে নেওয়া স্তনের আঁশটে গন্ধ ছাপিয়ে ইয়াহিয়া-টিক্কা-আয়ুব খানের জাতি হয়ে গেছে তাদের নব্য ওয়ালিদ,তাদের অনুকরণীয়। না বাঙ্গালী, না মুসলমান। বাংলাদেশী যবনদের প্রাইমারি আইডেন্টিটি কি, সেটা তারা নিজেরাই জানে না। বাংলাদেশের হিন্দুরা প্রায় শেষ। এবার খলজি বাঘকে হাই প্রোটিন ডায়েট জোগানো মডারেট মুসলমানদের পালা।
'ইউ ফিলদি অ্যানিমল্স্! ব্লাডি মুসলিম্স্! ব্রাইট ও প্রমিসিং ডাক্তারদের খাঁড়া হাতে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরেছ! কখনও বরিশালের দাঙ্গায়, কখনও নোয়াখালিতে! তাদের একমাত্র অপরাধ—তারা হিন্দু ছিল! বাংলাদেশের মাটি ভাসিয়ে দিয়েছ কতগুলো নিরপরাধ ইয়ং, ব্রাইট ছেলের রক্তে! তোমাদের কখনও ভালো হতে পারে? কোনওদিন হবে না! বাংলাদেশ ইজ আ কার্সড ল্যান্ড! আর তার জন্য দায়ী তোমরা। ইয়েস, ইউ। ওনলি ইউ! ইউ মুসলিমস্! কী করতে বাকি রেখেছে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা! ধর্মের ঝান্ডা তুলে বাংলাদেশকে মুসলিম প্রধান দেশ ঘোষণা করতে চেয়েছ! জানো? জানো কী করেছ তোমরা? কী করে ভাবলে এ দায়ভার থেকে তোমরা রক্ষা পাবে? ইউ আর কার্সড্! এই রক্তের দাম তোমরাও বংশানুক্রমে শোধ করবে! রক্ষা পাবে না! কেউ পার পাবে না! কেউ না!’
ভারত বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত 'শঙ্খচিল' সিনেমাটা দেখেছেন? লেখিকা সায়ন্তনী পুততুন্ডুর মূল উপন্যাসে এই কথা গুলোও আছে। কিন্তু, সিনেমাতে নেই। আপনাকে জানতে দেওয়া হয় না। পাছে আপনি জয় বাংলার আফিম ভুলে, শঙ্খচিল উপন্যাসের সুদীপ্তর মত বলে ওঠেন,' তোমরা কেউ ছাড় পাবে না। কেউ না। নট আ সিঙ্গেল ওয়ান।'
তথ্যসূত্র:-
১.জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, হুমায়ুন আহমেদ
২.পাকিস্তানের ভুত দর্শন, যতীন সরকার
৩.অসমাপ্ত আত্মজীবনী, মুজিবুর রহমান
৪.হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম–হুমায়ূন আহমেদ
৫.দেখা না-দেখায় মেশা, সুধীর চক্রবর্তী। প্রতিদিন রোববার, ২৬শে জুন, ২০১১
৬.Jabeen, Mussarat & Amir, Ali & Chandio, & Qasim, Zarina. (2018). Language Controversy: Impacts on National Politics and Secession of East Pakistan.
৭.Shaheed Dhirendranath Dutta. M.W. Manik. The Daily Star. February 21, 2014.
৮.শহীদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। গুণীজন আর্কাইভ।
৯.Shaheed Dhirendranath Dutta. M.W. Manik. The Daily Star. February 21, 2014.
১০.বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি ধ্বংসস্তুপ। দি নিউজ ডট কম। ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০
১১.বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব, কালিদাস বৈদ্য
১২. জীবনের স্মৃতিদীপে, রমেশ চন্দ্র মজুমদার
১৩.দুই সৈনিক, শওকত ওসমান
১৪.শঙ্খচিল, সায়ন্তনী পুততুন্ডু
১৫.প্রবর্তক, সম্পাদকীয়, ভাদ্র,১৩৫৩
১৬.ভাঙা মঠ, সালাম আজাদ
১৭. আমি বিজয় দেখেছি,এম আখতার মুকুল
১৮. Great Game East: India, China, and the Struggle for Asia's Most Volatile Frontier,(1 April,2015),Bertil Linter
১৯.The Blood Telegram: Nixon, Kissinger, and a Forgotten Genocide,Gary J. Bass
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন