তারানাথ খোট্টার “ভাষাদিবস”

 



“ফজরে উঠিয়া আমি দিলেদিলে কই,
হররোজ আমি যেন শরিফ হইয়া রই।
মুরুব্বিগন যাহা দেন ফরমান,
খিদমত করি তার করি সম্মান।”

"এর'ম উর্দু-বাংলা মেশানো বাল্যশিক্ষা কোত্থেকে পেলেন?"

বজরাদা মোবাইলের স্ক্রীন থেকে চোখ না সরিয়ে বললেন, "আর বলেন কেন, বাংলাদেশ থেকে মারুফভাই পাঠিয়েছেন। আজ হ্যাপি মাতৃভাষা দিবস না?"

একে একে আমরা জড়ো হচ্ছি দাসদার চায়ের কেবিনে। কয়লার উনুনে চাপানো কেটলিতে চা ধুমায়িত হচ্ছে। চায়ের কাপে তুফান ওঠার প্রস্তুতি।

এর মধ্যে তারানাথ খোট্টা ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল "মাতরিভাসা দিবোস টা কি কেস তোপদা?"

উফ, এই অশিক্ষিত ছাতুখোরটাকে মাতৃভাষার মর্ম কি করে বোঝাই! কোথা দিয়ে শুরু করি! সাতপাঁচ ভেবে, স্থির করলাম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ দিয়েই স্টার্ট করা ভালো।

বললাম, "একাত্তর সালে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পুর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়েছিল সেটা জানিস তো?"

তারানাথ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।

চেপে ধরলাম, "কেন আলাদা হয়েছিল বলতো?"

"অত লন্ড-লসুন বোলতে পারবো না তোপদা। কোন পলিটিকাল কারন ছিল। পারলামেন্টমাঁ সিট উট কি ডিসপুট ছিলো। যাঁহাতক হামে ইয়াদ হ্যায়।"

"আজ্ঞে না। ওটা আসল কারন না।" আমি তেতে উঠে বললাম। "পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তাই তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। যার পরিণতি হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ।"

শুনে তারানাথ কেমন ভেবলে গেল। বলল "আপনি বোলছেন কি উর্দু চাপিয়ে দিবার জন্য পুরব পাকিস্তান, পোসচিম পাকিস্তান থেকে অলগ হোয়ে গেলো।"

"আজ্ঞে হ্যাঁ। আরো কারন অবশ্যই ছিল, তবে ওইটাই আসল কারন।" এবার গুঠকাখোরটাকে কিছুটা বোঝাতে পেরেছি ভেবে আশ্বস্ত হলাম।

খানিকক্ষণ ভেবে তারানাথ পালটা প্রশ্ন করলো, “সাধিনোতার টাইমে পুরব বংগাল তাহলে পসচিম বংগাল থেকে কেনো অলগ হোয়েছিলো? তোখোন কি পরেশানি হয়েচিলো? পসচিম বংগাল কি পুরব বংগালকে বাংলামেঁ বাতচিত করতে দিচ্ছিলো না? 

শালা খোট... মানে ইয়ের বাচ্চা। খালি ত্যানা প্যাঁচায়। এসব আজাইরা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আজকের আনন্দবাজারটা টেনে নিলাম। ইতিমধ্যে চা এসে গেছে। চুলোয় যাক খোট টা। ওর পেছনে লেগে থাকলে আজ আপিসের হাজিরা খাতায় লাল ঢ্যাঁরা নিশ্চিত।

― তপজ্যোতি সরকার

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন