বন্দেমাতরম এবং তেনারা #১
এ সেই বন্দেমাতরম যা নিয়ে ১৯২০ থেকে কংগ্রেসের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিবাদ চরমে ওঠে৷
এ সেই বন্দেমাতরম ১৯২৩ সালে কংগ্রেসের কাকিনাড়া অধিবেশনে যে স্তোত্র পরিবেশনে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীতজ্ঞ বিষ্ণুদিগম্বর পালুস্করকে “শিরক” বিধায় বাধা দিয়েছিলেন কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সভাপতি “গান্ধীজির ডানহাত” মৌলানা মহম্মদ আলি৷ পন্ডিতজী সেই আপত্তিতে কর্ণপাত না করায় তিনি সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান৷
এ সেই বন্দেমাতরম ২০ শে মার্চ, ১৯৩৭ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ কাউন্সিল’ যে গানকে কংগ্রেস কর্তৃক ‘জাতীয় স্তোত্র’ ঘোষণার তীব্র বিরোধিতায় একটি রেজোলিউশান পাশ করে। এই রেজোলিউশানে আরো বলা হয়, বন্দে মাতরম শুধু ইসলাম বিরোধী এবং মূর্তিপুজক সংগীতই নয়, ভারতে প্রকৃত জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষের পথে বড়ো বাধাও। ১৯৩৪ সালে মহম্মদ আলী জিন্নাহ একটি আর্টিকেলে লেখেন, “Muslims all over india have refused to accept Vande Mataram or any expurgated edition of the anti-Muslim song as a binding national anthem.” ভারতব্যাপী কোন মুসলমান বন্দেমাতরম গাইবে না৷
এ সেই বন্দেমাতরম যা কারো মজহবী অনুভূতিতে আঘাত করে তাই অবিলম্বে কংগ্রেসের অধিবেশনে গাওয়া বন্ধ করতে হবে, এমন বিচিত্র দাবী তুলে ন্যাশানাল ফ্রন্ট পত্রিকায় কলম ধরেছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পরবর্তীতে সেই পার্টির সম্পাদক কমরেড অজয় কুমার ঘোষ৷
এ সেই বন্দেমাতরম যা গাওয়া হবে কি গাওয়া হবে না বিবাদে জর্জরিত কংগ্রেস নেতৃত্ব রবীন্দ্রনাথের মতামত জানতে চান৷ সুভাষকে লেখা এক পত্রে বিবাদ বাড়াতে না চেয়ে কবিগুরু জানান “The core of Bandemataram is a hymn to goddess Durga: this is so plain that there can be no debate about it... no Mussulman can be expected patriotically to worship the ten-handed deity as 'Swadesh'.... The novel Anandamath is a work of literature, and so the song is appropriate in it. But, Parliament is a place of union for all religious groups, and there the song cannot be appropriate. Since there are strong feelings on both sides, a balanced judgment is essential. In pursuit of our political aims we want peace, unity and good will - we do not want the endless tug of war...”
অনিচ্ছাসত্ত্বেও সুভাষ চন্দ্র বসু এ পরামর্শ মেনে নেন৷ মর্যাদাভ্রষ্ট হয় গানটি৷
অতঃপর, একটি বিনীত প্রশ্ন৷ সেই বহুনিন্দিত, বহুবিতর্কিত বঙ্কিম সৃষ্টিকে ঢাল বানিয়েই যদি বিদেশে নিজেদের প্রাণ বাঁচাবেন তবে দু কোটি মানুষকে রিফিউজি বানানোর মুল্যে কেন দেশভাগ করলেন?
বন্দেমাতরম গাইবেন না বলেই তো দেশভাগ চেয়েছিলেন৷ দেশকে মা বলবেন না বলেই তো দেশভাগ চেয়েছিলেন৷
কিন্তু, বিপদে পড়ে সেই ‘সুজলাং সুফলাং মলয়াজিশীতলাং’ মা কেই মনে পড়লো৷
কেননা ওই যে "বাই দ্য গ্রেস অফ যার" সে- উট- খেজুর গাছ-মরুভুমির বালি কোনটাই ঠিক মায়ের মত ভালো নয়৷ ভালো হতে পারে না...
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন