বিবেকানন্দ ও কমিউনিস্ট #১
আজ আপনাদের কাছে স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে দুই দলের বক্তব্যের নির্যাস রাখবো।
একদল হলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী বা কমরেড মুজাফফর আহমেদের ভাষায় হিন্দু রাজত্বের পুনরুত্থানকামী ব্রিটিশ বিরোধী। সূর্য সেন, হেমচন্দ্র ঘোষ, অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীরা এবং স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র এই দলে পড়েন। এঁরা জাতীয়তাবাদী। মোটামুটি যেকোনো বিপ্লবী দলে যেসব বই পড়তেই হতো সেগুলি হলো ভগবত গীতা, বিবেকানন্দ রচনাবলী এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ। ( দ্য রেনেসাঁ টু মিলিট্যান্ট ন্যাশনালিজম, ডঃ শংকর ঘোষ)
মাস্টারদা সূর্য সেন আনন্দমঠের আদর্শে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর দল। বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিদিন পড়তে হতো বিবেকানন্দের জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। (সূর্য সেনের স্বপ্ন ও সাধনা, বিপ্লবী অনন্ত সিংহ)
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সুভাষ বসুর নেতাজী হয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। নেতাজী লিখেছেন (“ভারত পথিক” গ্রন্থে),
“বিবেকানন্দের আদর্শকে যে সময়ে জীবনে গ্রহণ করলাম তখন আমার বয়স বছর পনেরােও হবে কি না সন্দেহ। বিবেকানন্দের প্রভাব আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল। তাঁর আদর্শ ও তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতাকে পুরােপুরি উপলব্ধি করার মতাে ক্ষমতা তখন আমার ছিল না কিন্তু কয়েকটা জিনিস একেবারে গােড়া থেকেই আমার মনে চিরকালের জন্য গাঁথা হয়ে গিয়েছিল। চেহারায় এবং ব্যক্তিত্বে আমার কাছে বিবেকানন্দ ছিলেন আদর্শ পুরুষ।...
অল্পদিনের মধ্যেই আমি রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দের একদল ভক্ত জুটিয়ে ফেললাম। এদের মধ্যে সুহৃৎচন্দ্র মিত্রও ছিলেন। স্কুলে বা স্কুলের বাইরে, যেখানেই হােক সযােগ পেলেই আমরা এই বিষয়ে আলাপ-আলােচনা শুরু করে দিতাম।...”
*
আরেকদল? ওয়েল, গেস করেছেন নিশ্চয়ই। আরেকদল হলো গণশত্রু কমিউনিস্টরা। সেই ‘প্রগতি আন্দোলন’-এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত যারা দেশের কোনো ভালো কাজে লাগেনি, তারা…
বর্তমানে কমিউনিস্টরা তো বিবেকানন্দ কুৎসাকে “আর্ট” বানিয়েছেন বা বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙছেন; কিন্তু আগেকার কমিউনিস্টরা কি ধোয়া তুলসিপাতা ছিলেন? না।
বামপন্থীদের তাত্ত্বিক মুখপত্র “মার্ক্সবাদী” পত্রিকায় নিয়মিত ভারতীয় মনীষীদের নিয়ে কুৎসা করা হতো। বাদ যেতেন না রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম থেকে বিবেকানন্দ।
সেখানেই বিবেকানন্দের মতকে “ইতিহাসের ডাস্টবিনে” ফেলার ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন কমরেডরা।
“...বিবেকানন্দের মত ও পথকে মার্কসবাদের দৃষ্টিতে বিচার করে দেখলে নরহরিবাবুরা কখনই শ্রমিকশ্রেণীকে বুর্জোয়া ঐতিহ্যের এই জঞ্জাল বহনের পরামর্শ দিতেন না। শ্রমিকশ্রেণী এই জঞ্জাল বয়ে বেড়াতে রাজী নয়—এর যথাযােগ্য স্থান ইতিহাসের ডাষ্টবিন।...”
―'মার্ক্সবাদী' (চতুর্থ সংকলন, জুলাই, ১৯৪৯, পৃ ১০৯-১৪০)। 'কমরেড' প্রদ্যোৎ গুহ।
(মার্ক্সবাদী সাহিত্য: বিতর্ক। প্রথম খন্ড। কমরেড ধনঞ্জয় দাশ)
এই 'নরহরিবাবু'-টা কে? কোথাকার কোন হরিদাস পাল?
উত্তরমুছুন