আসানসোলের ইমাম এবং একটি আদ্যন্ত হিন্দুবিদ্বেষী গালগল্পের সমাপ্তি

 


খুনিদের দেখেনি কেউ। কিন্তু রটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, খুন করেছে নাকি উগ্রবাদী হিন্দুরা। গোটা রাজ্যের মানুষ তেমনটাই জেনেছিলেন, বুঝেছিলেন।


মার্চ ২০১৮। রামনবমীর উৎসবের দিন আনন্দে মেতেছেন হিন্দু সমাজের মানুষেরা। তারই মধ্যে রানিগঞ্জে সশস্ত্র আরবদের পরিকল্পিত আক্রমণ চলল ভারতীয়দের ধর্মীয় মিছিলের উপরে। গোটা এলাকা জুড়ে রক্তের হোলিখেলা। কুপিয়ে কুপিয়ে মারা হল মহেশ মণ্ডলকে। গাড়ির নিচে থেঁতলে গেলেন প্রতিমা দেবী। সানডে গার্ডিয়ান লিখল কয়েকশো ঘরছাড়া মানুষের কথা।


পরবর্তী টার্গেট আসানসোল। এলাকার ভারতীয়রা প্রাণপণ চেষ্টায় রুখে দিলেন দাঙ্গাবাজ আরবদের। কিন্তু রানিগঞ্জের ঘটনা তো ফাঁস হয়ে যাবে। দুজনের নৃশংস খুনের ঘটনা চাপা দিতে কলকাতার মাওবাদীদের কলমে তৈরি হল রূপকথার গল্প। রূপকথায় থাকে স্বার্থপর দৈত্যের দয়ালু হয়ে ওঠার কথা। এখানে মানবিক ইমামের কাহিনী।


রূপকথা নয়? নিজেরাই মিলিয়ে দেখুন।


২০১৯ সালে এপ্রিলে ভোটের আগে আরবদের উসকে দিতে কলকাতার মাওবাদী সাংবাদিক লিখেছিলেন

"আজ থেকে ঠিক এক বছর এক মাস আগে আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল রশিদির ছেলে, ১৭ বছরের সিবঘাতুল্লা খুন হয়েছিল। রামনবমীর মিছিল থেকে সশস্ত্র হামলাবাজেরা বেরিয়ে এসে সিবঘাতুল্লাকে ঘিরে ধরে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরেছিল। তারপর সদ্য মাধ্যমিক দেওয়া ছেলেটার লাশ কুড়িয়ে এনে ওই এলাকার হাজার হাজার মুসলিম জনতা নুরানি মসজিদের সামনের চত্বরটায় জড়ো হয়েছিলেন। প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা।"


ওই এলাকা।

কোন এলাকা? সেই কথাও আছে ওই একই মাওবাদী লেখকের কলমে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে তিনিই লিখেছেন,

"আসানসোলের চাঁদমারি মোড়ে দাঁড়িয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওকে রোড কী ভাবে যাব। ভদ্রলোক আঁতকে উঠলেন— ‘ওখানে যাবেন কেন! পুরোটাই মুসলিম মহল্লা। কখন কী হয়ে যাবে কিচ্ছু বলা যায় না।... 

চাঁদমারি ছাড়ালাম। কিছু দূর যাওয়ার পরই শুরু হল ঘিঞ্জি, নোংরা এলাকা। গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাড়ি। মসজিদ। ফেজ টুপির মানুষ।...

আরেকটু এগোতে এলাকার চরিত্র বদলে গেল। এখানে হিন্দুর সংখ্যা কম। রাস্তায় ভিড়।...

গলির পর গলি, সরু রাস্তা, রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকা গরু আর অসংখ্য ধর্মীয় নিশান পেরিয়ে জাহাঙ্গীরি মহল্লায় পৌঁছনো গেল। সম্পূর্ণ মুসলিম এলাকা। হিন্দু কার্যত নেই।"


ধাপে ধাপে কীভাবে পৌঁছানো গেল জাহাঙ্গীরী মহল্লায়, দেখলাম আমরা। এবার ভেবে দেখুন তো, সেকুলার পশ্চিমবঙ্গে এরকম একটি আরব মহল্লায় ভারতীয় ধর্মের মিছিল নিয়ে ঢুকে কুপিয়ে কুপিয়ে একজনকে মারা সম্ভব? আমরা তো পার্কসার্কাস মেটিয়াব্রুজ খিদিরপুর উলুবেড়িয়া বেলিলিয়াস রোড দেখেছি। সেই জায়গাগুলোর ভয়াবহ পরিস্থিতি আমরা সকলেই জানি। সম্ভব ওখানে এরকম কিছু হবার পরে ওই এলাকার হিংস্র রক্তলোলুপ অপরাধপ্রবণ বাসিন্দাদের দুটো মিঠে কথা বলে চুপ করিয়ে দেওয়া?


আসলে খুনটা তাহলে কারা করেছিল? সেকুলার পক্ষ কিন্তু এইখানে এসে সম্পূর্ণ চুপ। বিনা দোষে জেল খেটে আসা ভারতীয় যুবক পিন্টু আর বিনয়, বেকসুর খালাস হয়ে গেল আদালতের রায়ে। দশজন সাক্ষীর প্রত্যেকে জানালেন, তাঁরা খুন করতে দেখেননি ওই হিন্দু যুবকদের। হাকিমদের সরকার, সিদ্দিকুল্লাদের সরকার, হাজি নুরুলদের সরকারও কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারল না তাদের বিরুদ্ধে।


শুধু রয়ে গেল কলকাতার মাওবাদীদের বানানো একটা রূপকথার গল্প, মহামানব ইমাম।


আর রানিগঞ্জের ঘরছাড়া কয়েকশো ভারতীয়, দু দুটো লাশ? তাদের কে মেরেছে সবাই জানে। কিন্তু তাদের নিয়ে কোনো সেনসেশন হবে না, মিথ্যা রূপকথার গল্প বানানো হবে না।


তাঁদের অপরাধ তাঁরা হিন্দু। পশ্চিমবঙ্গের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন। তাঁদের চাইলেই মেরে ফেলা যায়।


দোষ আমাদেরও। মহেশ মণ্ডল, প্রতিমা দেবীদের ধর্মের জন্য প্রাণ দেওয়ার ইতিহাস আমরাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারিনি।


বাম পতনের শব্দ হয়


মন্তব্যসমূহ