#TheKashmirFiles: একটি ‘নেগেটিভ’ রিভিউ
সত্য যত সত্যই হোক, কড়াভাবে বলতে নেই৷ যতটা সম্ভব কোমলভাবে বলতে হয়৷ নইলে প্রতিক্রিয়াশীল সমাজ তৈরী হয়৷
যেমন ধরুন, প্রথমেই দেখাতে হবে পিওকে থেকে ভারতীয় কাশ্মীরের দিকে উড়ে চলেছে একটি সাদা পায়রা৷ বুদ্ধিজীবি পায়রাটি ফারুক মালিকের জানালা থেকে গিয়ে বসলো পুষ্কর পন্ডিতের জানালায়৷ দূর থেকে ভেসে আসছে আজান ও শিবতান্ডবস্তোত্র একত্রে৷ হিমেল হাওয়া ভেসে ভেসে চলেছে আজান থেকে স্তোত্রে৷ পন্ডিতগৃহিনী ব্যাগ গোছাচ্ছেন৷ ব্যাগ গোছাতে গোছাতেই প্রতিবেশিনী মালিকের বেগমকে শিখিয়ে দিচ্ছেন নদরু আখনির নতুন রেসিপি৷
এরপর সিনেমার মুল অংশ,
১.পন্ডিতদের মেরে তাড়িয়েছে বললে হবে না৷ বলতে হবে বহিরাগতদের উস্কানিতে পন্ডিতরা যখন স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছিলেন, তখন আহমেদ দার ইত্যাদিরা তাদের ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছিলেন৷
২.সরলা ভাটকে ‘মেকানিকাল saw’ দিয়ে চিরে ফেলেছিলো, বললে হবে না৷ বলতে হবে, ওনাকে আগে এনেস্থেশিয়া দিয়ে তারপর খুবই কোমলহাতে saw-এর ব্যাবহার হয়েছিল। ব্যাবহারকারীদের বুক ফাটানো কান্না দেখলে যে কারো মন গলে যাবে৷
৩. “রালিভ গালিভ চালিভ” স্লোগানে হুমকি দেওয়া হত বললে হবে না৷ বলতে হবে ভৈরবী রাগে সেতারে সুর তুলে এমনভাবে “রালিভ গালিভ চালিভ” গাওয়া হতো, পন্ডিতরা কনকনে শীতের রাতে সম্মোহিতের মত স্রেফ ফতুয়া গেঞ্জি পরে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তেন৷
৪.টিকালাল তাপলু কপালের যে জায়গায় তিলক পরতেন, ঠিক সে জায়গায় তাকে পেরেক ঠুকে মারা হয় বললে হবে না৷ বলতে হবে, টাপলুর এক পাড়াতুতো ভাগ্নে সামার অলিম্পিকে শুটিংয়ে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো৷ সে তার জ্যেঠুর কপালে পেরেক টুকে শুটিং প্র্যাকটিস করতো৷ দেশভক্ত জ্যেঠুর ভাগ্নের অলিম্পিক প্রিপারেশনে কোনদিন বাঁধা দেন নি৷
৫. ওরা মাইকে প্রচার করতো, “কাশ্মির হবে পাকিস্তান, পন্ডিতদের তাড়িয়ে পন্ডিতানীদের সাথে”। এভাবে বললে হবে না৷ বলতে হবে ভাইফোঁটার ভারতীয় সংস্কৃতি কত মহান এবং জাতিধর্মের উর্ধ্বে তা পাকিস্তানের মত বর্বর রাষ্ট্রকে শেখানোর জন্য ওরা ওদের বোনদের রেখে দিতে চেয়েছিলো৷ এ মন্দার বাজারে বোনের স্বামীরা ভাইফোঁটার উৎসবে বেকার খরচাপাতি করে উপহার যাতে না কেনেন, তাই তাদের ক’দিন দিল্লি ঘুরে আসতে বলা হয়৷
৫. জাস্টিস গঞ্জুকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয় বললে হবে না৷ বলতে হবে, যুবকরা বনভোজনের জন্য পাখি শিকার করতে বেরিয়েছিলো৷ পাখিটা ঠিক গঞ্জুবাবুর মাথার উপরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো৷ অতর্কিতে গুলি চলে যায়৷ দুর্ভাগ্যজনক৷ তার অন্তিমযাত্রার সব ভার বহন করে এই যুবকরাই৷
৬. স্বামীর রক্তভেজা চাল স্ত্রীর মুখে ঠুসে দেওয়া হয় বললে হবে না৷ বলতে হবে, দুর্বৃত্তরা যতই দুর্বৃত্ত হোক স্বামীর অন্তিম স্পর্শ থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত করার পাপ করা হয় নি৷ স্বামীর স্পর্শ থাকুক স্ত্রীয়ের খাদ্যনালীতে, পাকস্থলীতে৷
৭. স্রেফ ধর্মটা এক নয় বলে ছাত্র গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে শিক্ষককে পরিবারকে, বললে হবে না৷ বলতে হবে, শিক্ষকের জীবন সার্থক৷ তিনি ছাত্রকে শেখাতে পেরেছেন, জড়দেহ অনিত্য৷ ব্রহ্ম সত্য৷ সব মানুষই পরম ব্রহ্মের অংশ৷ কেবলই জাগতিক মায়ার পর্দা ব্রহ্মদর্শনে বাঁধা৷ অতএব ছাত্র বেঁচে থাকুক বা মাষ্টারের পরিবার একই ব্যাপার৷ সবাই যখন পরম ব্রহ্মের অংশ তখন আর ভেদাভেদ করে কী লাভ! বরং ছাত্রের সৌজন্যে মাষ্টারের পরিবার মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হলো৷
সিনেমাটার খারাপ দিকগুলি হলো,
কোনও আহমেদ বা ওয়ানির ছেলে কোন ক্যাম্পবাসী পন্ডিতের মেয়েকে চিঠি লেখে না, “ঘর কব আওগে? লিখো কব আওগে৷ কে তুম বিন ইয়ে ঘর শুনা শুনা হ্যায়”৷ উত্তরে লাজুক অষ্টাদশীও কাঁপা কাঁপা হাতে লেখে না, “ম্যায় ওয়াপাস আউঙ্গি৷ জো ওয়াদা কিয়া বো নিভায়ুঙ্গি”৷
দেখা যায় না কোন নীতিনিষ্ঠ সেলিম চাচাকে৷ যাকে উপরওয়ালা বলিউড সিনেমায় বিবেকবোধের দারোয়ান বানিয়ে মর্ত্যে পাঠিয়ে থাকেন৷
দেখা যায় না, প্রসাদে সিমুই মেশানো কোন গঙ্গা যমুনী তহজিব৷
দেখা যায় না, পন্ডিতরা চলে যাওয়ার সময় কুঁচকি উজাড় করে কেঁদে চলা বিলাল চাচাকে৷
দেখা যায় না, পিঁয়াজের দাম ছাব্বিশ টাকা হয়ে যাওয়ায় ইনকিলাব করতে বেরোনো দুই ভিন্নধর্মের অভিন্নহৃদয়েসু বন্ধুকেও৷
দেখা যায় না, ইয়াসিন মালিকের সাহিত্যবোধ৷ তিনি উদাত্ত স্বরে আবৃত্তি করছেন, “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য৷ উচ্চ যেথা শির...”৷ দেখা যায় না, সেমিকন্ডাক্টারের উপর বিট্টার অসামান্য রিসার্চ৷ যার পেটেন্ট নিতে ইচ্ছুক তামাম প্রথম বিশ্বের দেশগুলি৷
এ মৃত নগরীর কথক হয়ে তুমি কি পাবে, অগ্নিহোত্রী? মৃতদের মুখে যদি রুজ পাউডার মাখিয়ে যদি সুখী গৃহকোণের অভিনয় নাই করাতে পারলে, যদি তাদের মুখ দিয়ে নাই বলাতে পারলে All is well তবে তুমি কীসের পরিচালক?! বলতে বাধ্য হচ্ছি সিনেমাটা যথেষ্ট শৈল্পিক হয় নি৷
সিনেমাটি কেউ দেখবেন না৷ মৃতদের কেউ দেখবেন না৷ বোধহীন চর্চাহীন শেকড়হীন জীবন্মৃতদের দেখানোর জন্য গোটা বলিউড আপনার সামনে দাঁড়িয়ে৷ ধন্যবাদ৷৷
সাজোর চপেটাঘাত.....
উত্তরমুছুনWell done ��
উত্তরমুছুনগোটা বলিউডের নারেটিভটাই উঠে এসেছে এই লেখনীতে ۔۔۔۔
উত্তরমুছুন